Type Here to Get Search Results !

বাংলা ব্যাকরণ : ধ্বনি


ধ্বনি ও বর্ণ



ধ্বনি :


শব্দের মূল উপাদানই হল “ধ্বনি”।
বাগযন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়াসে উচ্চারিত শব্দের অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম অংশ কে “ধ্বনি” বলে। 


ধ্বনির প্রকারভেদ :

ধ্বনি দুই প্রকার। যথা – 
  • স্বরধ্বনি এবং
  • ব্যঞ্জনধ্বনি ।

 

স্বরধ্বনি :

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস নির্গত বায়ু মুখবিবরেরে কোথাও বাধা প্রাপ্ত হয় না, সেই সকল ধ্বনিকে “স্বরধ্বনি” বলে। অন্য কোন ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই স্বরধ্বনি উচ্চারিত হতে পারে।

বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনির সংখ্যা – ৭ টি। যথা – ‘ই’, ‘উ’, ‘এ’, ‘ও’, ‘অ্যা’, ‘অ’ এবং ‘আ’।

 

ব্যঞ্জনধ্বনি :

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস নির্গত বায়ু বাগযন্ত্রের কোথাও না কোথাও বাধা প্রাপ্ত হয়, সেই সকল ধ্বনি কে “ব্যঞ্জনধ্বনি” বলে। স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হতে পারে না। 

বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা – ৩০ টি।

যথা –
  • ক থেকে ম পর্যন্ত (ঞ এবং ণ বাদে) - ২৩ টি
  • অন্তস্থ ধ্বনি (র এবং ল) - ২ টি
  • উষ্ণ ধ্বনি (শ, স, হ) - ৩ টি এবং
  • তাড়ণজাত ধ্বনি (ড় এবং ঢ়) - ২ টি।


 

 স্বরধ্বনির প্রকারভেদ :

জিহ্বার উপর নীচের অবস্থান অনুসারে স্বরধ্বনির প্রকারভেদ :

৪ প্রকার। যথা -
  • উচ্চস্বর – ই, উ
  • উচ্চমধ্য স্বর – এ, ও
  • নিম্নমধ্য স্বর – অ্যা, অ
  • নিম্নস্বর – আ


 

জিহ্বার সন্মুখ পশ্চ্যাৎ অবস্থান অনুসারে স্বরধ্বনির প্রকারভেদ :

৩ প্রকার। যথা -
  • সন্মুখ স্বরধ্বনি – ই, এ, অ্যা
  • পশ্চ্যাৎ স্বরধ্বনি – উ, ও, অ
  • কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি – আ

** তবে সুকুমার সেন –এর মতে “আ” কে সন্মুখ ও পশ্চ্যাৎ স্বরধ্বনি দুই স্বরধ্বনি বলা যায়


 

মুখবিবরের আয়তন আনুসারে স্বরধ্বনির প্রকারভেদ :

৪ প্রকার। যথা -
  • সংবৃত স্বরধ্বনি – ই, উ
  • অর্ধ সংবৃত স্বরধ্বনি – এ, ও
  • অর্ধ বিবৃত স্বরধ্বনি – অ্যা, অ
  • বিবৃত স্বরধ্বনি – আ

** সংবৃত – সংকুচিত, বিবৃত – প্রসারিত


 

ঠোঁটের আকার অনুসারে স্বরধ্বনির প্রকারভেদ :

২ প্রকার। যথা -
  • প্রসৃত স্বরধ্বনি – ই, এ, অ্যা, আ
  • বর্তুল স্বরধ্বনি – উ, ও, অ

** প্রসৃত – প্রসারিত, বর্তুল – সংকুচিত

 
 

যৌগিক স্বর

পাশাপাশি অবস্থিত দুই বা তার বেশি স্বরধ্বনি মিলিত হয়ে এক সাথে উচ্চারিত বা দল গঠন করলে, স্বরধ্বনির ওই যোগ কে “যৌগিক স্বর” বলে।
যৌগিক স্বর কে “সন্ধিস্বর” বা “সান্ধ্যাক্ষর” ও বলা হয়।
নিজস্ব চিহ্ন আছে এমন যৌগিক স্বরের সংখ্যা ২ টি। যথা – ঐ এবং ঔ।
 
 
 

অর্ধ স্বর

যে স্বরগুলি একক ভাবে দল গঠন করতে পারে না এবং অর্ধ রূপে উচ্চারিত হয়, সেই স্বরগুলি “অর্ধস্বর”।
এই স্বরগুলি মৌলিক স্বরের পরে বসে কিংবা যৌগিক স্বরের শেষাংশ অর্ধস্বর।
উদাহরণ – যাই (উচ্চারণের সময় ‘ই’ স্বর টি সংকুচিত হয়ে গেছে)।


 
 

উচ্চারণের স্থানানুসারে ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ :


  • কন্ঠ বা স্নিগ্ধ তালব্য ধ্বনি বা জিহ্বামূলীয় ধ্বনি – ৫টি। যথা – ক্‌, খ্‌, গ্‌, ঘ্‌, ঙ।
  • কন্ঠনালীয় ধ্বনি – ১ টি। যথা – হ্‌।
  • তালব্য ধ্বনি – ৫ টি। যথা – চ্‌, ছ্‌, জ্‌, ঝ্‌, শ্‌।
  • মূর্ধাণ্য ধ্বনি – ৬ টি। যথা – ট্‌, ঠ্‌, ড্‌, ঢ্‌, ড়্‌, ঢ়্‌।
  • দন্ত ধ্বনি – ৪ টি। যথা – ত্‌, থ্‌, দ্‌, ধ্‌।
  • দন্ত মূলীয় ধ্বনি – ৪ টি। যথা - র্‌, ল্‌, ন্‌, স্‌।
  • ওষ্ঠ ধ্বনি – ৫ টি। যথা – প্‌, ফ্‌, ব্‌, ভ্‌, ম্‌।

    

কন্ঠ বা স্নিগ্ধ তালব্য ধ্বনি বা জিহ্বামূলীয় ধ্বনি :

যে সকল ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বার পশ্চ্যাৎভাগ উন্নত হয়ে আলজিভের মূলের কাছাকাছি অর্থাৎ তালুর পশ্চ্যাৎ দিকের নরম অংশে কিংবা স্নিগ্ধ তালুতে বাধা প্রাপ্ত হয়, সেই সকল ব্যঞ্জনধ্বনি কে “কন্ঠ বা স্নিগ্ধ তালব্য ধ্বনি বা জিহ্বামূলীয় ধ্বনি” বলে।

বাংলা ভাষায় কন্ঠ বা স্নিগ্ধ তালব্য ধ্বনি বা জিহ্বামূলীয় ধ্বনির সংখ্যা ৫ টি। যথা – ক্‌, খ্‌, গ্‌, ঘ্‌, ঙ।

 

কন্ঠনালীয় ধ্বনি বা স্বরতন্ত্রীয় ধ্বনি :

যে সকল ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় কন্ঠনালীর মধ্যে অন্তর্গত স্বরতন্ত্রী দুটি কাছাকাছি হওয়ার ফলে শ্বাসবায়ু বাধাপ্রাপ্ত হয়, সেই সকল ব্যঞ্জনধ্বনি কে কন্ঠনালীয় ধ্বনি বা স্বরতন্ত্রীয় ধ্বনি” বলে।

বাংলা ভাষায় কন্ঠনালীয় ধ্বনি বা স্বরতন্ত্রীয় ধ্বনি কেবল মাত্র সংখ্যা ১ টি। যথা – হ্‌।

 

তালব্য ধ্বনি :

যে সকল ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় জিহ্বার প্রসারিত অগ্রভাগ শক্ত তালুতে কিংবা সন্মুখ তালু স্পর্শ করে শ্বাসবায়ুর পথে বাধার সৃষ্টি করে, সেই সকল ব্যঞ্জনধ্বনি কে “তালব্য ধ্বনি” বলে।

বাংলা ভাষায় তালব্য ধ্বনির সংখ্যা ৫ টি। যথা - যথা – চ্‌, ছ্‌, জ্‌, ঝ্‌, শ্‌।

 

মূর্ধাণ্য ধ্বনি বা প্রতিবেষ্ঠিত ধ্বনি :

যে সকল ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় জিহ্বার অগ্রভাগ উল্টে গিয়ে গিয়ে তালুর উর্ধ্বতম অংশে অর্থাৎ মূর্ধা স্পর্শ করে এবং মূর্ধা স্পর্শ করার ফলে শ্বাস বায়ু মূর্ধা তে বাধা প্রাপ্ত হয়। সেই সকল ব্যঞ্জনধ্বনি কে “মূর্ধাণ্য ধ্বনি বা প্রতিবেষ্ঠিত ধ্বনি” বলে। 

বাংলা ভাষায় মূর্ধাণ্য ধ্বনি বা প্রতিবেষ্ঠিত ধ্বনির সংখ্যা ৬ টি। যথা – ট্‌, ঠ্‌, ড্‌, ঢ্‌, ড়্‌, ঢ়্‌।

 

দন্ত ধ্বনি :

যে সকল ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা শিখর কিংবা জিহ্বার প্রান্ত ভাগ উপরের দাঁতের পেছনের অংশ স্পর্শ করে শ্বাস বায়ু কে বাধা দান করে, সেই সকল ব্যঞ্জনধ্বনি গুলিকে “দন্ত ধ্বনি” বলে।

বাংলা ভাষায় দন্ত ধ্বনির সংখ্যা - ৪ টি। যথা – ত্‌, থ্‌, দ্‌, ধ্‌।



দন্ত মূলীয় ধ্বনি :

যে সকল ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বার অগ্র ভাগ দাঁতের উপরের অংশের গোড়ায় ঢিবির মত জায়গাটি কে স্পর্শ করে শ্বাস বায়ুকে বাধা দান করে, সেই সকল ব্যঞ্জনধ্বনি গুলিকে “দন্ত মূলীয় ধ্বনি” বলে।

বাংলা ভাষায় দন্ত মূলীয় ধ্বনির সংখ্যা ৪ টি। যথা - র্‌, ল্‌, ন্‌, স্‌।

 

ওষ্ঠ ধ্বনি

যে সকল ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় অধর ওষ্ঠ স্পর্শ করায় অর্থাৎ নীচের ঠোঁট উপরের ঠোঁট স্পর্শ করায় শ্বাস বায়ু বাধা প্রাপ্ত হয়, সেই সকল ব্যঞ্জনধ্বনি কে “ওষ্ঠ ধ্বনি” বলে।

বাংলা ভাষায় ওষ্ঠ ধ্বনির সংখ্যা ৫ টি। যথা – প্‌, ফ্‌, ব্‌, ভ্‌, ম্‌।




 

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad