বর্ণ কাকে বলে ?
বর্ণ :
বাগযন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়াসে উচ্চারিত শব্দের ক্ষুদ্রতম
অংশ কে ধ্বনি বলে। এই ধ্বনি কে আমরা যখন বিভিন্ন চিহ্ন বা সংকেতের দ্বারা লিখিতভাবে
প্রকাশ করি, ধ্বনি প্রকাশের সেই সকল চিহ্ন বা সংকেত গুলিকে “বর্ণ” বলে।
বর্ণের প্রকারভেদ :
বর্ণ কে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
স্বরবর্ণ এবং
ব্যঞ্জনবর্ণ
স্বরবর্ণ কাকে বলে ?
স্বরবর্ণ :
যে সকল বর্ণ অন্য কোন বর্ণের সাহায্য ছাড়ায় স্পষ্ট রূপে উচ্চারিত
হয় এবং অন্য বর্ণের উচ্চারণে সাহায্য করে, সেই সকল বর্ণ গুলিকে “স্বরবর্ণ” বলে।
বাংলা ভাষার বর্ণমালায় স্বরবর্ণের সংখ্যা ১২ টি। কিন্তু বর্তমান
সময়ে ‘৯’ এর ব্যবহার নেই।
স্বরবর্ণের শ্রেণীবিভাগ
উচ্চারণ সময়ের তারতম্য অনুসারে স্বরবর্ণ ২ প্রকার। যথা –
হ্রস্বস্বর এবং
দীর্ঘস্বর।
হ্রস্বস্বর কাকে বলে ?
হ্রস্বস্বর :
যে সকল স্বরবর্ণ উচ্চারণে কম সময় লাগে, সেই সকল স্বরবর্ণ
গুলিকে “হ্রস্বস্বর” বলে।
বাংলা বর্ণমালায় হ্রস্বস্বরের সংখ্যা – ৪ টি। যথা – অ, ই,
উ এবং ঋ।
সংস্কৃত মতে প্রতি হ্রস্বস্বরের মাত্রা সংখ্যা – ১।
দীর্ঘস্বর কাকে বলে ?
দীর্ঘস্বর :
যে সকল স্বরবর্ণ
উচ্চারণে হ্রস্বস্বরের তুলনায় অধিক সময় লাগে, সেই সকল স্বরবর্ণ গুলিকে “দীর্ঘস্বর”
বলে।
বাংলা বর্ণমালায় দীর্ঘস্বরের সংখ্যা – ৭ টি। যথা – আ, ঈ,
ঊ, এ, ঐ, ও এবং ঔ।
বাংলা বর্ণমালায় দীর্ঘস্বরের মাত্রা সংখ্যা – ১ টি। কিন্তু
সংস্কৃত মতে প্রতি দীর্ঘস্বরের মাত্রা সংখ্যা – ২ টি।
ব্যঞ্জনবর্ণ কাকে বলে ?
ব্যঞ্জনবর্ণ :
যে সকল বর্ণ স্বরবর্ণের সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না,
সেই সকল বর্ণ গুলিকে “ব্যঞ্জনবর্ণ” বলে।
বাংলা বর্ণমালায় ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা – ৪০ টি। কিন্তু ‘ঁ’
ছাড়া ৩৯ টি।
যথা –
- স্পর্শ বর্ণ – ২৫ টি (‘ক’ থেকে ‘ম’ পর্যন্ত)
- উষ্ম বর্ণ – ৪ টি (শ্, ষ্, স্ এবং হ্)
- অন্তঃস্থ বর্ণ – ৪ টি (য্, র্, ল্ এবং ব্)
- তাড়নজাত বর্ণ – ২ টি (ড় এবং ঢ়)
- আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণ – ২ টি (ং এবং ঃ)
- অবশিষ্ট বর্ণ – ২ টি (য় এবং ৎ)
স্পর্শ বর্ণ কাকে বলে ?
স্পর্শ বর্ণ –
যে সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় জিহ্বার কোন না কোন অংশ কণ্ঠ,
তালু, মূর্ধা, দন্ত স্পর্শ করে কিংবা অধরের সাথে ওষ্ঠ স্পর্শ করে সেই সকল বর্ণ গুলিকে
“স্পর্শ বর্ণ” বলে।
বাংলা বর্ণমালায় স্পর্শ বর্ণের সংখ্যা – ‘ক’ থেকে ‘ম’ পর্যন্ত
২৫ টি।
উচ্চারণের স্থানানুসারে স্পর্শবর্ণের শ্রেণীবিভাগ
উচ্চারনের স্থানানুসারে বাংলা বর্ণমালায় স্পর্শবর্ণ ৫ প্রকার।
যথা –
- ‘ক’ বর্গ – ক, খ, গ, ঘ এবং ঙ
- ‘চ’ বর্গ – চ, ছ, জ, ঝ এবং ঞ
- ‘ট’ বর্গ – ট, ঠ, ড, ঢ এবং ণ
- ‘ত’ বর্গ – ত, থ, দ, ধ এবং ন
- ‘প’ বর্গ – প, ফ, ব, ভ এবং ম
ব্যঞ্জনবর্ণের শ্রেণীবিভাগ
উচ্চারণ
রীতির বৈশিষ্ট অনুযায়ী –
উচ্চারণ
রীতির বৈশিষ্ট অনুযায়ী ব্যঞ্জনবর্ণ গুলিকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
অল্পপ্রাণ
বর্ণ
মহাপ্রাণ
বর্ণ
অঘোষ
বর্ণ
ঘোষ
বর্ণ এবং
অনুনাসিক
বা নাসিক্য বর্ণ।
অল্পপ্রাণ বর্ণ কাকে বলে ?
অল্পপ্রাণ বর্ণ :
যে
সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় ফুসফুস নির্গত বায়ু কম প্রবাহিত হয়, সেই সকল বর্ণ গুলিকে “অল্পপ্রাণ
বর্ণ” বলে।
স্পর্শ
বর্ণের প্রথম এবং তৃতীয় বর্ণ অল্পপ্রাণ বর্ণ।
মহাপ্রাণ বর্ণ কাকে বলে ?
মহাপ্রাণ বর্ণ :
যে
সকল বর্ণ উচ্চারনের সময় ফুসফুস নির্গত বায়ু অধিক পরিমানে নির্গত হয়, সেই সকল বর্ণ গুলিকে
“মহাপ্রাণ বর্ণ” বলে।
অল্পপ্রাণ
বর্ণের সাথে হ-কার জাতীয় নিশ্বাস ধ্বনি যুক্ত হলেই মহাপ্রাণ বর্ণ উচ্চারিত হয়।
স্পর্শ
বর্ণের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ বর্ণ মহাপ্রাণ বর্ণ।
অঘোষ
বর্ণ কাকে বলে ?
অঘোষ বর্ণ :
যে
সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় কণ্ঠস্থ স্বরতন্ত্রী অধিক পরিমানে কম্পিত না হওয়ার ফলে কণ্ঠ
স্বর অত্যন্ত মৃদু হয়, সেই সকল বর্ণ গুলিকে “অঘোষ বর্ণ” বলে। ,
শ্,
ষ্, স্ এবং স্পর্শ বর্ণের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণ গুলি অঘোষ বর্ণ।
ঘোষ বর্ণ
কাকে বলে ?
ঘোষ বর্ণ :
যে
সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অধিক পরিমানে কম্পিত হওয়ায় কণ্ঠ স্বর গভীর মনে
হওঁয়, সেই সকল বর্ণ গুলিকে “ঘোষ বর্ণ” বলে।
হ্
এবং স্পর্শ বর্ণের প্রতি বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ ঘোষ বর্ণ।
স্বরযন্ত্রের ভেতর উল্টো “V” আকৃতির দুটি পাতলা পাতলা নমনীয় পর্দা বা শ্লৈষ্মিক
ঝিল্লি থাকে, সেই পর্দা বা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি দুটি কে “স্বরতন্ত্রী” বলে।
মানুষের স্বরতন্ত্রীর কম্পন প্রতি সেকেণ্ডে ২০ – ২০,০০০ বারের মধ্যে হলে,
সেই কম্পনের ফলে সৃষ্ট শব্দ শোনা যায়।
পুরুষদের তুলনায় মহিলা এবং শিশুদের স্বরতন্ত্রী অধিকতর সরু ও ছোট। ফলে প্রতি
সেকেণ্ডে কম্পনের সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় অধিক। তাই শিশু ও মহলাদের কণ্ড নিঃসৃত স্বর
অধিক তীক্ষ্ণ হয়।]
নাসিক্য বর্ণ :
যে
সকল বর্ণ উচ্চারণ কালে মুখ মধ্যস্থ বায়ু কেবল মুখবিবর দিয়ে নির্গত না হয়ে নাক দিয়েও
নির্গত হয়, সেই সকল বর্ণ গুলিকে “নাসিক্য বর্ণ” বলে।
অন্যান্য
স্পর্শ বর্ণ অপেক্ষা নাসিক্য বর্ণ বেশিক্ষণ স্থায়ি হয়।
স্পর্শ
বর্ণের প্রতি বর্গের পঞ্চম বর্ণ নাসিক্য বর্ণ।
উষ্মবর্ণ :
যে
সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ুর প্রাধান্য অধিক অর্থাৎ যতক্ষণ শ্বাস থাকে ঠিক ততক্ষণ
এই বর্ণ গুলির উচ্চারণ প্রসারিত করা যায়, সেই সকল বর্ণ গুলিকে “উষ্মবর্ণ” বলে।
শ্,
ষ্, স্ এবং হ্ উষ্মবর্ণ।
শ্,
ষ্, স্ এই বর্ণত্রয় উচ্চারণের সময় প্রলম্বিত একটি শিসধ্বনির সৃষ্টি হয়, বলে এই বর্ণত্রয়
কে “শিষবর্ণ” ও বলা হয়।
অন্তঃস্থ বর্ণ :
যে
সকল বর্ণ উচ্চারণের সময় মুখবিবর সম্পূর্ণ ভাবে উন্মুক্ত ও থাকে না আবার সম্পূর্ণ রূপে
বন্ধ ও হয়ে যায় না অর্থাৎ উচ্চারণ স্বর ও ব্যঞ্জন এবং স্পর্শ বর্ণ ও উষ্মবর্ণের মাঝামাঝি,
সেই সকল বর্ণ গুলিকে “অন্তঃস্থ বর্ণ” বলে।
বাংলা
ভাষায় অন্তঃস্থ বর্ণ – য্, র্, ল্ এবং ব্।
এই
৪ টি বর্ণের মধ্যে য্ ও ব্ ‘অর্ধ স্বর’ এবং র্ ও ল্ ‘তরল স্বর’।
আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণ কাকে বলে ?
আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণ :
ং এবং ঃ বর্ণ দুটি আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণ।
স্বর ও ব্যঞ্জনের সাথে বর্ণ দুটির কোন যোগ নেই বলে বর্ণ দুটি “অযোগ বর্ণ”। অথচ উচ্চারণ কালে নানা রূপ পরিবর্তন ঘটায়, এই কারণে বর্ণ দুটি “বাহ্”। এই দুই বৈশিষ্ট্যের জন্য এদের “অযোগবাহ বর্ণ” -ও বলা হয়।
সংক্ষিপ্তাকারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
হ্রস্বস্বর – অ, ই, উ, ঋ।
দীর্ঘস্বর – আ, ঈ, ঊ, এ, ঐ, ও, ঔ।
স্পর্শ বর্ণ – ‘ক’ থেকে ‘ম’ পর্যন্ত সব গুলিই।
উষ্ম বর্ণ – শ্, ষ্, স্, হ্।
অন্তঃস্থ বর্ণ – য্, র্, ল্, ব্।
তাড়ণজাত বর্ণ – ড়্, ঢ়্।
অল্পপ্রাণ বর্ণ – ক্ গ্, চ্, জ্, ট্, ড্, ত্, দ্, প্, ব্।
**
স্পর্শ বর্ণের ১ম ও ৩য় বর্ণ।
মহাপ্রাণ বর্ণ – খ্, ঘ্, ছ্, ঝ্, ঠ্, ঢ্, থ্, ধ্, ফ্, ভ্।
** স্পর্শ বর্ণের ২য় এবং ৪র্থ বর্ণ।
অঘোষ বর্ণ – ক্, খ্, চ্, ছ্, ট্, ঠ্, ত্, থ্, প্, ফ্, শ্, ষ্, স্।
** স্পর্শ বর্ণের ১ম ও ২য় বর্ণ এবং শ্, ষ্, স্।
ঘোষ বর্ণ – গ্, ঘ্, ঙ্, জ্, ঝ্, ঞ্, ড্, ঢ্, ণ্, দ্, ধ্, ন্, ব্, ভ্, ম্, হ্।
** স্পর্শ বর্ণের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম বর্ণ এবং হ্।
নাসিক্য বর্ণ – ঙ্, ঞ্, ণ্, ন্, ম্।
** স্পর্শ বর্ণের ৫ম বর্ণ।