ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জনতত্ত্ব :
• প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা “নীলনদের দান” হিসাবে খ্যাত ।• ভূমধ্যসাগর ও ইজিয়ান সাগর দ্বারা তিন দিক পরিবেষ্টিত হওয়ার কারণে প্রাচীন গ্রীস নৌবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেছিল ।
• ভারতের দক্ষিণ পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত থাকায় সমগ্র ভারত ভূখণ্ড কে ভৌগলিক দিক দিয়ে উপদ্বীপও বলা হয় ।
• ভারতের উত্তর সীমান্তে অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মত এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে ভারতীয় ভূখণ্ড কে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে ।
• ভারতের মধ্যভাগে অবস্থিত বিন্ধ্য পর্বত ভারত কে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছে । যথা –
১. উত্তরাপথ বা আর্যাবর্ত এবং
২. দক্ষিণের অংশটি দক্ষিণাপথ বা দাক্ষিণাত্য ।
• প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যর বিভিন্নতা অনুসারে ভারতবর্ষ কে ৫ টি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা –
১. উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
২. সিন্ধু গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র বিধৌত সমতল ভূমি
৩. মধ্য ভারতের মালভূমি
৪. দক্ষিণাপথের মালভূমি এবং
৫. সুদূর দক্ষিণের উপদ্বীপ অঞ্চল ।
• ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ ভারতবর্ষ কে “নৃতত্ত্বের যাদুঘর” বলে উল্লেখ করেছেন ।
• নৃতত্ত্ববিদ ডঃ বিরজাশঙ্কর গুহ ভারতবাসীদের জনতত্ত্বের ভিত্তিতে মোট ৬ টি শাখা এবং ৯ টি উপশাখায় ভাগ করেছেন ।
৬ টি শাখা হল –
১. নিগ্রোবটু বা নিগ্রিটো
২. প্রোটো অস্ট্রোলয়েড বা আদি অষ্ট্রেলিয়
৩. ভূমধ্যসাগরীয় বা মেডিটারেনিয়ান
৪. প্রশস্ত শির বা ব্রাকিসিফেলিক
৫. আর্য বা নর্ডিক এবং
৬. মোঙ্গলীয় বা মোঙ্গলয়েড ।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে ভূ –প্রকৃতির প্রভাব :
• ভারতের কয়েকটি গিরিপথের নাম – খাইবার, পীরপঞ্জল, বানিহাল, বোলান, গোমাল, খোজাক প্রভৃতি।ভারতবর্ষের মূলগত ঐক্য :
• নানান প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও ভারতীয়দের মধ্যে এক মূলগত ঐক্য গড়ে উঠেছে । ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ একেই “Unity in Diversity” এবং “Fundamental Unity of India” বলে চিহ্নিত করেছেন ।• হিন্দুদের প্রাচীন ধর্মশাস্ত্রের ভাষা – সংস্কৃত ।
• ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত উর্দু ভাষা ও হিন্দী – পার্সী – তুর্কী ভাষার মিলনে তৈরী ।
• “বিষ্ণুপুরাণে” রয়েছে – নানা জাতি অধ্যুষিত এই ভারতবর্ষের সমস্ত অধিবাসীই ভরত রাজার সন্তান । অর্থাৎ প্রতিটি ভারতবাসী একই পূর্বপুরুষের বংশধর ।
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের উপাদান :
• একাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতে এসে আরবীয় পণ্ডিত অল-বিরুনী বলেছিলেন - “হিন্দুরা ইতিহাস রচনা সম্পর্কে একেবারেই উদাসীন” ।• খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত কাশ্মীরের রাজবংশের ধারাবাহিক ইতিহাস কলহন বিরচিত “রাজতরঙ্গিণী” ।
• আর্যদের ভারতবর্ষে আসার পর থেকেই ভারতীয় সভ্যতার সূত্রপাত ।
• মৌর্য সম্রাট অশোকের শিলালিপি ও স্তম্ভলিপিগুলি তাঁর রাজত্বকালের অতি মূল্যবান উপাদান হিসেবে স্বীকৃত ।
• সম্রাট অশোকের শিলালিপিগুলি – ব্রাহ্মী, প্রাকৃত ও খরোষ্ঠী লিপিতে লেখা ।
• ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক জেমস প্রিন্সেপ অশোকের শিলালিপির প্রথম পাঠোদ্ধার করেন ।
• গুপ্ত সম্রাট সমুদ্র গুপ্তের সভাকবি – হরিসেন কতৃক সংস্কৃত কাব্যে রচিত সমুদ্র গুপ্তের বিজয় কাহিনী এলাহাবাদে একটি স্তম্ভগাত্রে খোদাই করে রাখেন । যা এলাহাবাদ প্রশস্তি নামে খ্যাত ।
• চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুশকেশীর, সভাকবি – রবিকীর্তি রচিত “আইহোল প্রশস্তি” থেকে জানা যায় যে – ‘সকলোত্তরা পথনাথ’ হর্ষবর্ধন পুলকেশী কতৃক পরাজিত হয়ে দাক্ষিণাত্যে আর অগ্রসর হতে পারেননি ।
• ‘আইহোল প্রশস্তি’ টি একটি মন্দির গাত্রে উৎকীর্ণ হয়েছিল ।
• কলিঙ্গরাজ খারবেল -এর - “হস্তিগুম্ফা লিপি” ।
• শকরাজা রুদ্রদামন -এর - “জুনাগড় লিপি” ।
• সাতবাহনরাজা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর - “নাসিক প্রশস্তি” ।
• কৌনজরাজ হর্ষবর্ধন -এর - “তাম্রশাসন” ।
• পশ্চিম এশিয়ায় প্রাপ্ত বোঘজ কোই (Boghoz Koi) শিলালিপি আর্যদের ভারতে আগমন কাল নির্ণয়ে সাহায্য করেছে ।
• পারস্যের পার্সেপলিস নগরে প্রাপ্ত “নকস – ই - রুস্তম” শিলালিপি থেকে পারসিকদের ভারতের উপর পশ্চিমাঞ্চলে রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা সম্বন্ধে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় ।
• কোন কোন কুষাণ রাজার মুদ্রায় শিব ও বৃষের ছবি অঙ্কিত থাকায় অনুমান করা যায় যে, ঐ সকল রাজারা শৈব ছিলেন ।
• গুপ্তরাজ প্রথম চন্দ্রগুপ্ত এর মুদ্রায় লক্ষী দেবীর প্রতিকৃতি তাঁর ধর্মমতের পরিচয় বহন করে ।
• সমুদ্র গুপ্তের কোন কোন মুদ্রায় ঘোড়া ও বীণাবাদনরত ছবি পাওয়া যায়, যা থেকে ইঙ্গিত মেলে তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন এবং সঙ্গীত বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন ।
• সাতবাহন রাজাদের মুদ্রায় জাহাজের ছবি, যা সামুদ্রিক বানিজ্যে তারা বিশেষ মনোযোগী ছিলেন তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় ।
• গান্ধার শিল্প, অজন্তা ইলোরার গুহা চিত্র, খাজুরাহোর মন্দির ও শিল্প সুষমা ইত্যাদি প্রাচীন ভারতীয় শিল্পকলায় উৎকৃষ্টতার নিদর্শন বহন করে ।
• কৌটিল্য -এর “অর্থশাস্ত্র” ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে অত্যন্ত মূল্যবান গ্রন্থ ।
• বাণভট্ট রচনা করেন সম্রাট হর্ষবর্ধন সম্পর্কে “হর্ষচরিত” গ্রন্থ টি ।
• পালরাজা রামপালের পিতৃভূমি উদ্ধারের কাহিনী নিয়ে লেখা সন্ধ্যাকর নন্দীর “রামচরিত” ।
• কল্যাণের চালুক্যরাজ ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের রাজত্ব কাল সম্পর্কে কবি বিহ্লন রচনা করেন “বিক্রমাঙ্কদেবচরিত” ।
• গ্রীক দূত মেগাস্থিনিস -এর “ইণ্ডিকা” গ্রন্থে মৌর্য যুগের ভারতবর্ষ সম্বন্ধে সুন্দর বর্ণনা লিপিবদ্ধ রয়েছে ।
• হিউয়েন সাঙ -এর চীনা ভাষায় রচিত ভ্রমণ বৃত্তান্ত “সি – ইউ - কি” থেকে হর্ষবর্ধন -এর রাজত্ব কাল সম্পর্কে জানা যায় ।
• হর্ষোত্তর যুগে সমসাময়িক ভারতবর্ষ সম্পর্কে জানা যায় ইৎসিং -এর ভারত ভ্রমন থেকে ।
• ফা – হিয়েন গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের যুগে এদেশে এসে ভারতবর্ষ সম্পর্কে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা লিপি বদ্ধ করেন ।
• আরবীয় মনীষী অল – বিরুনী খ্রিষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুলতান মামুদের সঙ্গে এদেশে আসেন ।
• অল – বিরুনী রচিত “তহকিক্ – ই - হিন্দ” বা “কিতাব – উল - হিন্দ” গ্রন্থে তৎকালীন ভারতবর্ষের ধর্ম, সমাজ, শিক্ষা, মানুষের আচরণ ব্যবহার, জ্যোতিষ ও আয়ুর্বেদ সম্বন্ধে বহু মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায় ।
প্রাচীন ভারতে বিখ্যাত বিদেশী পর্যটক :
• মেগাস্থিনিস -এর ভারত ভ্রমন কাল ৩০০ থেকে ৩০৫ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে (যীশু খ্রীষ্টের জন্মের পূর্বে) ।• ফা – হিয়েন -এর ভারত ভ্রমন কাল ৩৯৯ থেকে ৪১৪ খ্রীষ্টাব্দ ।
• হিউয়েন সাঙ -এর ভারত ভ্রমন কাল ৬৩০ থেকে ৬৪৪ খ্রীষ্টাব্দ ।
• ই - ৎসিং -এর ভারত ভ্রমন কাল ৬৭১ থেকে ৬৯৫ খ্রিস্টাব্দ ।
অসংখ্য ধন্যবাদ....
ReplyDeleteভালো হয়েছে।
ReplyDelete