আর্যজাতি :
- ঘোড়া ছিল তাদের প্রধান বাহন।
- সম্ভবত খ্রীঃ পূঃ ২০০০ থেকে ১৫০০ অব্দের মধ্যে কোন এক সময় তারা ভারতে প্রবেশ করে।
- আর্যদের বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডারের প্রাচীনতম গ্রন্থটির নাম “ঋকবেদ সংহতি”।
বৈদিক সাহিত্য :
- “বিদ্” শব্দ থেকে "বেদ” শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ হল "জ্ঞান"।
- বেদের আর এক নাম "শ্রুতি"।
- অনেকের ধারণা খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১০০০ অব্দের মধ্যে "বেদ" রচিত হয়।
- বেদের সংখ্যা হল চারটি - ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব।
- প্রতিটি বেদের আবার চারটি ভাগ আছে - সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ।
- সংহিতা অংশে দেবতার উদ্দেশ্যে মন্ত্র ও স্তোত্র পদ্যে লেখা রয়েছে।
- ব্রাহ্মণ অংশে আছে যাগযজ্ঞের বিধি। এবং এটি গদ্যে লেখা।
- আরণ্যকে লেখা আছে বৃদ্ধ বয়সে সংসারধর্ম পরিত্যাগ করে অরণ্যবাসী হয়ে ধর্মজীবন-যাপনের প্রয়োজনীয় তত্ত্ব।
- আর আরণ্যকের এই দার্শনিক তত্ত্ব পরিণতি পেয়েছে উপনিষদে।
- উপনিষদগুলি বেদের পূর্ণতম পরিণতি। সমগ্রভাবে এগুলি বেদের অন্ত বা শেষ অংশ। তাই উপনিষদের আর এক নাম "বেদান্ত"।
- আর্যদের এই সুবিশাল সাহিত্য-ভাণ্ডারকে এক কথায় বলে বৈদিক সাহিত্য। এর ভাষা হল সংস্কৃত।
- সূত্র-সাহিত্যের দু’টি ভাগ। যথা - বেদাঙ্গ ও দর্শন।
- বেদাঙ্গ ছ'ভাগে বিভক্ত - শিক্ষা(বিশুদ্ধ উচ্চারণ), ছন্দ(বেদের ছন্দ সম্বন্ধে জ্ঞান), ব্যাকরণ(ভাষা ব্যবহারের নিয়ম), নিরুক্ত(শব্দের উৎপত্তির ব্যাখ্যা), জ্যোতিষ(গ্রহ-নক্ষত্রাদি সম্বন্ধে জ্ঞান) ও কল্প(যাগযজ্ঞের বিধান)।
- দর্শন-শাস্ত্রের সংখ্যাও ছ'টি। যথা - সাংখ্য,যোগ,ন্যায়, বৈশেষিক, পূর্ব-মীসাংসা ও উত্তর-মীমাংসা। এই ষড়দর্শন ভিন্ন ভিন্ন ছয় জন ঋষি দ্বারা রচিত।
বৈদিক সাহিত্যে মানুষের জীবন :
- ঋকবেদে বর্ণিত আর্য সভ্যতাকে বলা হয় আদি বৈদিক সভ্যতা।
- আদি বৈদিক সভ্যতা ছিল গ্রাম কেন্দ্রিক।
- গ্রাম কেন্দ্রিক সমাজের মূল ভিত্তি ছিল একান্নবর্তী পরিবার।
- পরিবার ছিল পিতৃতান্ত্রিক। পিতা কে বলা হত ‘গৃহপতি’।
- সমাজে নারীদের স্থান ছিল যথেষ্ট সন্মানজনক। উচ্চ শিক্ষার পথও তাদের কাছে ছিল অবারিত। অপালা, বিশ্ববারা, ঘোষা, মমতা, লোপামুদ্রা প্রমুখ বিদুষীরা ছিলেন তার উজ্জ্বলতম নিদর্শন।
- ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্র - এই চারিবর্ণ বা জাতিতে বৈদিক সমাজ বিভক্ত ছিল।
- যাগযজ্ঞ, পূজা অর্চনা, শাস্ত্রপাঠ, বিদ্যাদান ইত্যাদি যারা করতেন তাঁরা "ব্রাহ্মণ", যুদ্ধবিগ্রহ, রাজ্য শাসন ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শীরা "ক্ষত্রিয়", কৃষি কাজ, পশু পালন, শিল্প কর্ম, ব্যবসা বাণিজ্যে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা "বৈশ্য", আর এই তিন শ্রেণী কে যারা সেবা ও শ্রম দান করত সেই অনার্য দাসরা "শূদ্র" নামে পরিচিত ছিল।
- তবে সমাজে অশ্পৃশ্যতার কোন চিহ্ন দেখা যায়নি। কারণ ব্যক্তির গুণানুসারে ‘কর্মবিভাজন’ করার জন্যই এই ব্যবস্থার উদ্ভব হয়। জন্মসূত্রে বর্ণভেদ করা হয়নি।
- 'বিশ' কথাটি থেকেই 'বৈশ্য' শব্দের উৎপত্তি।
- বৈদিক সমাজের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য চতুরাশ্রম।
- প্রথম স্তর বা আশ্রমের নাম ব্রহ্মচর্য, দ্বিতীয় গার্হস্থ্য আশ্রম, তৃতীয় আশ্রমটির নাম - বাণপ্রস্থ এবং শেষ আশ্রম - সন্ন্যাস।
- ঋকবেদের যুগে আর্যসভ্যতা ছিল গ্রাম কেন্দ্রিক।
- কৃষি ছিল তাদের প্রধান জীবিকা।
- 'নিষ্ক' ও 'মনা' নামে দু'রকমের মুদ্রার প্রচলন তখন ছিল বলে জানা যায়।
- যজ্ঞই ছিল তখন ধর্ম আচরণের একমাত্র পথ।
- দ্যৌঃ অর্থাৎ আকাশ এবং পৃথিবী অর্থাৎ পৃথিবী ছিল আর্যদের দেব-দেবী।
- আর বিশের শাসনকর্তাকে বলা হ'ত 'বিশপতি' বা 'রাজন'।
- ‘সভা' ও 'সমিতি' নামে দুটি জন-পরিষদ রাজার প্রশাসনিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত করত।
পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে মানুষের জীবন :
- এ যুগে "রামায়ণ" ও "মহাভারত" মহাকাব্য দু’টি রচিত হয়েছিল বলে অনেকে এটি মহাকাব্যের যুগ বলে ও উল্লেখ করেছেন।
- বাল্মীকির রামায়ণ ও ব্যাসবেদের মহাভারত পরবর্তীকালে যুগে যুগে নানা সংযোজন ও প্রক্ষেপ ঘটেছে।
- ঋকবেদের যুগে প্রধান দেবতা ইন্দ্রের পরিবর্তে প্রজাপতি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব এই যুগে দেবতার স্থান লাভ করেন।
- আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে প্রথমে ‘সপ্তসিন্ধু' অঞ্চলে তাদের উপনিবেশ গড়ে তোলে।
- আফগানিস্তান থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে তারা 'সপ্তসিন্ধু' নামে উল্লেখ করেছিল।
- শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা, বিতস্তা, সিন্ধু এবং সরস্বতী - এই সাতটি নদ - নদী ঐ অঞ্চল দিয়ে বহে যাওয়ার জন্যই হয়ত আর্যরা অঞ্চলটিকে 'সপ্তসিন্ধু’ নাম দিয়েছিল।
- পণ্ডিতগণের মতো খ্রীষ্টজন্মের দেড় হাজারেরও বেশি বছর আগে হিট্টাইট জাতি প্রথম লোহার ব্যবহার শুরু করেছিল।
- হিট্টাইট জাতি এশিয়া মাইনরে (তুরস্কে) বসবাস করত।
( তথ্য ঋণ ঃ ভারতীয় সভ্যতার রুপরেখা - চক্রবত্রী, কয়াল ও হাজরা )